মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে ফিরলেন দেবী দুর্গা
সুনামগঞ্জে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হলো শারদীয় দুর্গোৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ জেলায় নির্বিঘেœ সম্পন্ন হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। পূজার শুরু থেকে বিসর্জন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতা ছিল লক্ষণীয়। প্রতিটি মন্ডপে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি পুলিশ এবং আনসার সদস্যরা মোতায়েন ছিলেন। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, র্যাবের টহল ছিল চোখে পড়ার মতো। সীমান্ত এলাকার পূজা মন্ডপগুলোতে পুলিশ-আনসার সদস্যদের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যগণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন।
বৃহস্পতিবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় উৎসবের। এর আগে জেলার ৪২৪টি পূজামন্ডপে উৎসবমুখর পরিবেশে চলে পূজা-অর্চনা, ভক্তদের প্রার্থনা ও পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ।
বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী উপলক্ষে সকাল থেকেই শহর ও গ্রামাঞ্চলের মন্দির-মন্ডপগুলোতে ভিড় জমান ভক্তরা। দেবী দুর্গার বিদায়ের আগে মন্ডপে মন্ডপে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেন নারীরা। দেবীর চরণের সিঁদুর নিয়ে নিজেদের রাঙিয়ে তুলেন তারা।
শাস্ত্রমতে, স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন নারীরা দেবী দুর্গার সিঁথিতে দেওয়া সিঁদুর নিজের সিঁথিতে লাগিয়ে আশীর্বাদ নেন। পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গা মাকে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর একে অপরকে সিঁদুর লাগিয়ে দেন তারা। সিঁদুর খেলা শেষে শেষবারের মতো দেবীর আরাধনা করেন তারা।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই সুনামগঞ্জ শহরের জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন নদীর ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়। শঙ্খনাদ-উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাকের বাদ্যে, দেবী বন্দনার গান আর অশ্রæভেজা ভালোবাসায় ‘দুর্গতিনাশিনী’ দেবীকে সাড়ম্বরে বিদায় জানান মর্ত্যরে বাসিন্দারা। ‘আনন্দময়ী’র বন্দনায় যে উৎসবের শুরু হয়েছিল ষষ্ঠীর সকালে, দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনে তার সাঙ্গ হলো বৃহ¯পতিবার। পাঁচদিন ভক্তরা মেতে ছিলেন উৎসব আনন্দে।
সনাতন ধর্ম মতে, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বাবার বাড়ি থেকে পুত্র-কন্যা নিয়ে দুর্গা ফিরে গেছেন কৈলাসে তার স্বামীর ঘরে। এক বছর পর নতুন শরতে আবার তিনি আসবেন এই ধরণিতে।
সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকামতে, এবার জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা গজে (হাতি) চড়ে স্বর্গালোক থেকে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসেন; যার ফল হিসেবে বসুন্ধরা শস্যপূর্ণা হয়ে উঠবে। দেবী স্বর্গালোকে বিদায় (গমন) নিয়েছেন দোলায় (পালকি) চড়ে; যার ফল হচ্ছে মড়ক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ ও মহামারির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার - এটি শুধু একটি শ্লোগান নয়, এটি আমাদের রাজনৈতিক দর্শন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবসময় সামাজিক সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে আসছেন। সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। সুনামগঞ্জের প্রতিটি পূজামন্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি বিএনপি নেতাকর্মীরাও সক্রিয় ভ‚মিকা রেখেছেন। আমাদের এমন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাড. বিমান কান্তি রায় বলেন, দেবী দুর্গা কৈলাসে ফিরে গেছেন। সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক দল, জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবাইকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের সহযোগিতায় জেলায় পূজা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা নিরাপদে পূজা উদযাপন করতে পেরেছেন। সুনামগঞ্জ যে শান্তি এবং সম্প্রীতির জেলা তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের সম্প্রীতির এই বন্ধন চিরকাল বজায় থাকবে - এই প্রত্যাশা করি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ